দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দর নেশা গুলোর মধ্যে একটা সম্ভবত একটা নেশা একা থাকতে চাওয়া। একা একা ঘুরা, একা একা কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া, একা শপিং করা আর নাইট শোতে একা একা একটা সিনেমা দেখা। রাতে বাড়ি ফিরে একা একা বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। কানে হেডফোনে ডিলানের কোন একটা ট্র্যাক শুনতে শুনতে ফুটপাথে হাঁটা। হটাত করেই মনে হয় কেউ যদি একটা কল দিয়ে জিগ্যেস করতো লাঞ্চ টা করেছি কিনা। পরক্ষনেই ভুলে যাই। সিগারেট টানতে টানতে সামনে এগিয়ে যাই। একা থাকার সময়টা উপভোগ করাই শ্রেয়। আবার চিন্তা করি কখনো কি সিগারেটটা ছাড়তে পারবো? বাজে নেশা। কেউ যদি মুখ থেকে টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলতো আজকে আর না। অনেক গুলো তো হলো। চিন্তাগুলো থেমে যায় তখনি। প্রশ্রয় দেই না। সব কিছুকে প্রশ্রয় দিতে হয় না। Read More
রবিনসন ক্রুসো, আমি ও বোহেমিয়ান স্বপ্নেরা
সাফল্যের চেয়েও হেরে যাওয়ারা বেশি চেনা হয়। সুখের চেয়েও বেশি কাছের হয় দুঃখেরা। হাসির শব্দের চেয়ে চেপে রাখা কান্নার শব্দের ডেসিবল অনেক বেশি। সওয়াবি শুনতে পায়না। সবার সব কিছু শোনা উচিত না। যার যা শোনা দরকার সে সেটা ঠিকই শুনে নেয়। স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝখানে ফারাক করাটা এক সময় খুব জটিল হয়ে দাড়ায়। হারতে হারতে এক সময় জিততে ভুলে যাওয়া। আজ আর চিঠি লিখা হয় না। পুরনো চিঠি গুলোও আর পড়া হয় না। গড়িয়ে পড়া কয়েক ফোটা চোখের জলেই চিঠি গুলো মলিন হওতে শুরু করে। তাই আর পড়া হয়না। ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে কখন যে সত্যসত্যই ভালো থাকতে শুরু করে মানুষ গুলো। কষ্টের অনেক রঙ হয়। সাদাকালো না শুধু। ভ্যান গগের আকা সেই ছবিটার মতন। মানুষ তখনি তোমাকে দাম দিবে যখন তুমি বলবে তোমার বড় বড় স্বপ্নের কথা। বলবে কিভাবে তুমি সেগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চাও। কেউ কেউ হয়তো পিঠপিছে মজা নিবে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এ তোমাকে কদর করবে। আর যখন তুমি সাফল্য পাবে তখন তোমার স্ট্রাগলের গল্প বেচেই তো দিন পার করে দিতে পারবে। বোহেমিয়ান স্বপ্ন গুলোর কথা কেউ শুনতে চায়না। ভবঘুরের স্বপ্নের কথা তো কোন টকশোতে বলা যায় না। বেচা যায় না। বুকে চেপে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই হাতের সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দেই। শূন্য চোখে আকাশের দিকে তাকায় শুধু উড়ে যাওয়ার কথা ভাবি। ভাবি জাহাজ ডুবিতে কোন নির্জন দ্বীপে নিঃসঙ্গ জীবন শুরু করবো। জানি হবে না অমন কিছু। ওইসব শুধু রবিনসন ক্রুসোর সাথে হয়। আমার সাথে না। আমাদের মতন মানুষের সাথে না। Read More
গুলশান অফিস পাড়া
অফিস অঞ্চলে ঘুরছি। বিনা কারণে রাস্তায় হাঁটতে খুব ভালো লাগে। যদি কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়। ঠিক এই আশায় না। জাস্ট মনে হলো আর কি। হাতিরঝিল পাড়ি দিয়ে সোজা গুলশান অফিস পাড়ায়। পড়ন্ত বিকেলে কিছু খুঁজে আমার চোখ। আমি জানি না কি খুঁজে। খুব ছবি তুলতে ইচ্ছা করে। তুলই অনেক ছবি। ছবি তোলার হাত একবারেই ভালো না। খুব ভালো ফটোগ্রাফার যদি হতে পারতাম। জানি কোনদিন পারবোনা। তাও ছবি তুলবো। ট্রেন্ডিং কিছু হ্যাশট্যাগ দিয়ে ঠিকই ইন্সটাগ্রামে পোষ্ট করবো। আমি কখনো হাততালি চাই না। শব্দ ভালো লাগেনা। আজকেও ঘুরলাম। কিছু ছবির আশায়। একটা ভাঙ্গাচুরা DSLR আছে। ওটা দিয়ে ছবি তোলার চেয়ে মনে হলো মোবাইলেই ভালো আসে। পড়ন্ত বিকেলের ছবি তুলতে ভালো লাগে। Read More
ছোট গল্প
উপন্যাস আমার পছন্দের জিনিস না। ছোট গল্পের সন্ধানে কুকুরের মতন এদিক সেদিক ছোক ছোক করি। কখনো পাই, কখনো পাইনা। কখনো কখনো আধ-খাওয়া সিগারেটের মতন পাই। তাও ছোট গল্প খুজে বেড়াই বৃষ্টিতে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে কোন কানা গলিতে। কিংবা কাদায় মাখানো গ্রাম্য রাস্তায় চলে যাওয়া। তাও তোমাদের হাইওয়ে তে উঠবোনা। ওখানে চালানোর মতন দ্রুতগতির বাহন নেই আমার। ও রাস্তায় শুধু টোলের হিসেব, অকটেনের লিটারের হিসেব, সময়ের হিসেব। অতশত হিসেব আমার মাথায় থাকেনা। হাঁটা রাস্তাই আমার পছন্দ। অথবা সাইকেলের রাস্তা। ক্রিং ক্রিং বেল বাজবে। কোন যানজট থাকবেনা। কর্কশ হর্নের শব্দ পাগল করবেনা। কখনো কখনো কোন নেড়ি কুকুর সঙ্গী হবে। কিছুদূর হয়তো আসবে আমার সাথে। তারপর আবার একা একা হাঁটা। নিজের অজান্তেই প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা ধরিয়ে ফেলবো। হয়তো ততক্ষণে বেশ কিছু ছোটগল্প পেয়ে গেছি। ছোট গল্প কুড়াতে হয়। ঠিক যেন সকালের ঝিনুক। কুড়িয়ে নিয়ে মালা গাঁথতে জানতে হয়। সরাসরি তাকানো যায় না। আড়চোখে দেখে বুঝে নিতে হয়। বাস্তবতা আর কল্পনার মিশেল টাও জমাতে হয়। কোন শিশির বিন্দুর কিংবা একটা জোনাকি পোকারও হয়তো না-বলা গল্প আছে। সেটাও কি অনুভব করা সম্ভব? হয়তো সম্ভব। কতবার মরার পরে একবার বাঁচা যায়?
নীরবতা
একটা বিশাল শান্ত সমুদ্র সৈকতের তীরে আমি বসে কোন কাউচে। একটাই মাত্র কাউচ। আর সৈকতটাকেও কোন সাধারণ মনে হচ্ছেনা। তেপান্তরের মাঠর সাথে কোথায় যেন মিল আছে সৈকতটার। ও, হা পেয়েছি কোন অন্ত নেই এই সৈকতের। ঢেউ গুনে যাচ্ছি বসে বসে। কিন্তু এই ঢেউয়ের কোন শেষ নেই, কোন শুরু নেই। হটাত নিজেকে অনুভব করলাম। না, আর তরুণ নেই আমি। পরিণত হয়েছি এক বৃদ্ধে। খুব বেশি বৃদ্ধ না কিন্তু বুড়ো বলার জন্য যথেষ্ট। চিরাচরিত অভ্যাসে পকেটে হাত চলে গেলো স্মার্টফোন টার জন্য। না ওটাও নেই। থাকলেও খুব বেশি লাভ হত বলে মনে হয়না। এতক্ষণে আমি বুঝে গেলাম আমি আর পৃথিবীতে নেই। এতটা শান্তই পৃথিবীর কোথাও থাকতে পারেনা। নিজেকে এখন সময়ের চেয়েও অনেক বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার পর এখন আর সিগারেট ও টানতে ইচ্ছা করলোনা। জানতেও ইচ্ছা করছে না, আমি কই আছি। একটা নীরবতা আমাকে গ্রাস করতে চাইলেও ঢেউয়ের গর্জন বার বার তাকে বাধা দিচ্ছে। কৃতজ্ঞতাবোধ করলাম সমুদ্রের কাছে। এখন আমার কাছে টাকার কোন দাম নেই, ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। খুঁড়িয়ে চলা স্বপ্ন আর মরে যাওয়া আশাদের ও কোথাও আর দেখিনা।
রডোডেনড্রন আর স্যালমনের গল্প
কোন এক পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে ছোট একটা দোকান। চা, সিগারেট আর পানের সাথে ট্যুরিস্টদের জন্য ইন্সট্যান্ট নুডুলস। সারা দিন বেচা বিক্রি শেষে দোকান বন্ধ করে একটা সিগারেট ধরায় বাসায় ফেরা। হয়তো সেখানে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছেনা। তবুও আমি স্বপ্ন দেখি সেই নিস্তব্ধতার। ছোট একটা কাঠের ঘর ধোঁয়ায় ভর্তি। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সকালে ঘুম ভাঙতেই পাহাড়ের রডোডেনড্রন ফুলের উপড়ে শিশির বিন্দুর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে অনেকটা সময় চলে যাবে। তারপর আবার গিয়ে দোকান খোলা। দোকানটা বেশ নিরিবিলি জায়গায় হবে। খুব বেশি ট্যুরিস্ট আসবেনা। যারাই আসবে অনেক কথা বলবো তাদের সাথে। তারপর আবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আমার আবার বাড়ি ফেরা। লোকাল বিড়ি টানতে টানতে। তোমাদের বিল গেটস কিংবা ওয়ারেন বাফেট হওয়ার স্বপ্ন তোমাদের কাছেই থাক। তোমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা বেচুক সেসব স্বপ্ন। আমি কারো বেচা স্বপ্ন কিনতে চাই না। তোমাদের মতন বড় ও হইতে চাইনা। Read More
ফ্লয়েড, একটি প্রেগন্যান্ট হাতি ও অন্যান্য
এই দুনিয়া তে সব চেয়ে সস্তা সম্ভবত মুসলমানের জীবনের মূল্য। গত কয়েকদিন ধরে ফ্লয়েডের জন্য হোমপেজ ভর্তি পোষ্ট দেখেছি। শেষ দুদিনে কেরালায় মৃত প্রেগন্যান্ট হাতির জন্য। কয়েক দিন আগেই দিল্লি দাঙ্গায় ৫৩ জন মুসলমানের মৃত্যুর খবর এসছে। যারা ফ্লয়েড আর হাতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব তাদের কাউকেই সামান্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখই নাই। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃখ প্রকাশে না প্রকাশে কিছুই আসে যায় না। প্যালেস্টাইন কিংবা সিরিয়ার জেনোসাইডের জন্য কেউ এতটুকু বিচলিত না। যদি কারো বিচলিত হওয়া না হওয়ায় কিছুই আসে যায় না কিন্তু যে বিষয়টা অ্যাালারমিং মনে হয়ে সেটা হলো আমাদের এই নতুন ফেসবুক জেনারেশন কে আমেরিকায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ এর মৃত্যু কিং পোয়াতি হাতির মৃত্য যতখানি নাড়া দেয় তার ১% ও নাড়া দেয় না ৫০ জন মুসলিমের মৃত্য। সম্ভবত এরা স্মার্টনেস মনে করে আমেরিকায় ইস্যুতে প্রতিবাদ জানানো। কিন্তু লাখখানেক মুসলিম হত্যা হলেও একটা সামান্য পোস্ট দিতে এদের লজ্জা লাগে। হয়তো মনে করে মানুষজন জঙ্গি ভাববে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর প্রিয় হলিউড সেলেব্রেটিদের সাথে গলা মিলায় বলতে পারে ‘I can’t breathe” কিন্তু হাজার খানেক সিরিয়ানের মৃত্যু তাদের সামান্য নাড়াও দেয় না। শেষ বিচারের দিন আমাদের আমাদের মুসলিম ভাই বোনে দের নির্বাচারে হত্যার জন্য আমাদের কি ভূমিকা ছিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। আমেরিকার ফ্লয়েড কিংবা কেরালার হাতি নিয়ে না। চোখের সামনে একটা ব্যাকবোনলেস আবাল ফেসবুক জেনারেশন দেখে আসলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হয়।
চ্যাটিং
চ্যাটিং এর অভ্যাস কিংবা বদভ্যাস টা হয় ২০০৬/২০০৭ এর দিকে। ‘পানু’ টাইপ জিনিস পাতি দেখতে আর দশটা টিনেজারের মতন সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া আসা ছিলো। ক্যাফের প্রায় সব পিসিতেই BDChat ইন্সটল করা থাকতো। নিক একটা নিয়েই ঢুকে যাওয়া। চ্যাট করতে করতে এক সময় খুব চমকপ্রদ একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। অনলাইনে একজন স্ট্রেঞ্জার এর সাথে যতটা প্রাণ খুলে কথা বলা যায় সম্ভবত নিজের সব চেয়ে কাছের বন্ধুর সাথেও বলা যায় না। BDChat কিংবা Yahoo Chatroom গুলোতে সারা দিন এ পড়ে থাকতাম। খুব ভালো শ্রোতা হওয়ার জন্য কত মানুষের দুখ-কষ্টের কাহিনী শোনা লাগতো তার কোন ইয়াত্তা নেই। সব সময় যে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথেই কথা হত ব্যাপারটা এমন না। কিন্তু শুনতাম। বেশিরভাগ সময় খেয়াল করতাম অনলাইনে সুখী মানুষের উপস্থিতি খুব কম ( ২০০৭ – ২০১০ এর কথা বলছি)। বড় চাকুরীজীবী, গায়িকা, ডিজে, ও-লেভেল ফেল করা কিশোর এমনকি পতিতারও সুখ-দুখের কথা শুনেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করেছি। আবার মুহূর্তেই যে যার মতন গায়েবও হয়ে গিয়েছি। অনেকেই পরিচয় গোপন রেখে তাদের অনেক ভীষণভাবে ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলো বলতো। কখনো কখনো বিরক্ত লাগতো আবার কখনও বা ভালোই লাগতো। এমনও অনেক মানুষ ছিলো যাদের সাথে বছরের পর বছর কথা বলে গেছি কিন্তু তাদের আসল নামটাও জানতাম না। ফেসবুকে থাকা এই জেনারেশন কোনদিন ওই সময়ের চ্যাটের অভিজ্ঞতা পাবেনা। Yahoo Chat রুমের পাকিস্তানি রুমে গিয়া বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজায় রুম থেকে গালি খাওয়ার পর যে আদিম আনন্দ প্রাপ্তি হইতো সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব না। Read More
করোনার দিনলিপিঃ পার্ট -১
করোনা তে কি কি ফেরত আসছে দেখছিলাম। কক্সবাজার বীচে সাগরলতা, ডলফিন, কিংবা বাতাসে শুদ্ধতা। আজকে কত নাম্বার দিন ঠিক জানি না। হিসেব থাকে না কোন কিছুর। তবে মনে হয় আকাশে শকুন আসতেও খুব বেশি বাকি নাই। মৃতদেহের লোভে ঢাকার আকাশেই হয়তো দেখা যাবে ওদের। হটাত মৃত্যুকে খুব বেশি ভয় পেতে শুরু করেছি। কত কিছুই না করার ছিলো। শিখার ছিলো। ইচ্ছা ছিলো একদিন আমি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া আলাদা করে চিনতে পারবো। ধরতে পারবো বট আর অশ্বত্থ তফাতটাও। ঘরে রাখার জন্য একটা পরিত্যাক্ত বাবুই পাখির বাসাও যে খুজে ফিরছিলাম। চারিদিকে মৃত্যুর নিস্তব্ধতা। পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে রডোডেন্ড্রনের উপর জমে থাকে শিশিরও আর কোন দিন দেখা হবে না। শান্ত আর নিস্তব্ধ ঢাকা শহর খুব কাঙ্ক্ষিত ছিল। কিন্তু এভাবে আমার শহরকে দেখবো, কখনো চাইনি। এমনটা কি হবার কথা ছিলো ? একটাই তো জীবন। কি নিদারুণ অপচয়। আকাশের চাঁদটাও যেন ডুকরে কাঁদে। চোরাবালি কি চুরি করা যায় ? খামখেয়ালী স্বপ্ন গুলো বার বার ফিরে ফিরে আসে। ভীষণভাবে আস্তিক আমি এখন শুধু মহান স্রষ্টার একটা মিরাকলের অপেক্ষায়।
আমার আমি
আমার কাছে দুনিয়ার সব চেয়ে কঠিন কাজটা মনে হয় নিজের সম্পর্কে লিখা। সবার দেখাদেখি আমারো একটু লিখতে ইচ্ছা করলো। ভীষনভাবে মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার। মায়ের মুখে শুনেছি আটাশির বন্যায় আমার জন্ম। জন্ম তারিখটাও কেমন যেন ৮/৮/৮৮। যাই হোক স্কুলশিক্ষক বাবাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি অতি অল্প রোজগারে পাঁচ জন মানুষের একটা সংসার টানতে। ছোট বেলায় আমার খুব কম চাওয়াই বাবা পূরণ করতে পারতেন। তখন অনেক দুঃখ হলেও এখন বুঝি সেটা আমার জন্য একটা বিশাল শিক্ষা ছিলো। ঢাকায় যে এলাকায় থাকতাম সেখানে অন্য সমবয়েসী ছেলেদের সাথে আমার মেলামেশা এক প্রকার বারণ ছিলো। স্কুল আর কোচিং টাইমটা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময় ঘরে বন্দি কাটতো। তাতে একটা উপকারই হয়েছিলো। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে লাগলো। ক্লাস নাইনে ওঠার আগেই গল্পগুচ্ছ, শরৎচন্দ্র রচনাবলী, জুল্ভার্ন, শার্লক হোমস সহ আর কত বই সাবাড় করে ফেলেছিলাম। সাথে তো তিন গোয়েন্দা থাকতোই। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। আস্তে আস্তে আমাকে শিকল খুলে মুক্ত করে দেয়া হলো পরিবার থেকে। কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ। ভার্সিটি জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া। আবার প্রথম প্রেম হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। সব মিলিয়ে জীবনটা কেমন কঠিন হতে লাগলো দিন দিন। আমার স্বপ্নগুলো খুব ছোট ছিলো। একটা প্রেম করবো। পালিয়ে বিয়ে করবো। প্রথম প্রথম বাসা থেকে মেনে নিবে না। হয়তো কোন ছাদের এক চিলেকোঠায় টোনাটুনির সংসার পাতবো। বাবার মতই অল্প আয়ে টেনেটুনে সংসার চলবে। যাই হোক কোন স্বপ্ন পূরন হলোনা। গদবাধা জীবন থেকে দূরে থাকতে ফ্রীল্যান্সিং কে পেশা হিসাবে নিয়েছি। এখন জীবনে একটাই স্বপ্ন ঘুরে বেড়ানোর। বোহেমিয়ান জীবন আমাকে চুম্বকের মতন টানে। কখনো জেলেদের সথে নৌকায় ঘুরবো, কখনোবা ট্রাকের হেল্পারের সাথে বস্তার উপর শুয়ে শুয়ে রাতের তারা গুনবো। প্রতি রাতে এমন একটা জীবনের কথা চিন্তা করতে করতেই ঘুমাতে যাই। হয়তো সত্যি সত্যি এমন একটা জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুব বেশি কিছু লিখতে পারি না নিজের সম্পর্কে তাও অনেক কিছু লিখলাম। সবাই ভালো থাকবেন। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে এই বিপদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।