বিড়ি কিংবা সিগারেট খুবই আজব প্রকৃতির একটা জিনিস। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন প্রভাবকের জন্য এর স্বাদ ও পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমনঃ বাজারের টাকা বাঁচাইয়া কিনা বিড়ির এক টেস্ট। বড়লোক বন্ধুরে ছিল দিয়া খাওয়া বিড়ির আরেক টেস্ট। মনের দুঃখে টানা বিড়ির টেস্ট আর মনের সুখে টানা বিড়ির টেস্ট কখনোই এক হয় না। নতুন প্যাকেট খুইলা ফ্রেশ একটা বিড়ির স্বাদ যেমন অনন্য আবার ড্রয়ারে খুজে পাওয়া বহুত দিনের পুরান একটা ড্যাম বিড়ির স্বাদ টাও মন্দ না। গার্লফ্রেন্ডের সাথে বইসা টানা বিড়ি আর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বইসা টানা বিড়ির টেস্টের মধ্যেও তফাৎ আছে। ম্যাচের কাঠি দিয়া বিড়ি ধরাইলে বারুদের একটা ফ্লেভার পাওয়া যায় আবার গ্যাস লাইটার দিয়া বিড়ি ধরাইলে গ্যাসের ফ্লেভার। জিপ্পো দিয়া বিড়ি ধরাইলে তো পুরাই গ্যাসোলিনের ফ্লেভার। অর্ধেক বিড়ি খায়া নিভায় রাইখা পরের দিন বাকি বিড়িটা ধরাইলে আবার তিতা স্বাদ । বিড়ির পিছন দিয়া এক টুকরো মেনথল ঢুকায় খাইলে রিফ্রেশিং ফ্লেভার। কালবৈশাখীতে প্রচণ্ড বাতাসে বিড়ির এক টান সাথে মুখে ছিটা আসা ঝড়ের ঝাঁপটা। এমন টেস্ট আর কোথায় পাওয়া যায় !!! Read More
হার
হার মেনে নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকারমধ্যে কোন লজ্জা নেই। বিশ্বাস করো, পরাজয় সবাই মানতে পারে না। তুমি স্কটল্যান্ডের লিজেন্ডারি রাজা ব্রুস না যে বার বার আক্রমণ করে একদিন সফল হবে। মাঝে থেকে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই হয়তো চলে যাবে। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়াই কিছু মানুষের নিয়তি। হার মেনে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটানোর জন্য কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করে রাখায় কোন দোষ নাই। সবাইকে কে দেখানোর কিছু নাই যে তুমিও পারো। সবাই পারে না। সবাইকে পারতে হয় না। পরাজয়ের তীব্র যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আসা বুকটা শক্ত করে মুখে একটা স্মিত হাসি যদি রাখতে পারো ওইটাই তোমার বিজয়। “এক্সসেপশন” কখনো ‘এক্সাম্পল’ হয়না, কোন মোটিভেশনাল স্পিকারকে এটা বলতে শুনি নাই। ভীষণভাবে মধ্যবিত্ত আমি খুব ভাল হারতে জানি। জীবনটা রূপকথা না যে সবসময় হ্যাপি এন্ডিং হবে। এর শেষ টা খুব শোচনীয় হতে পারে। হয়তো ওই পাড়ে ভালো কিছু থাকবে। কে জানে। Read More
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান – কবির সুমন
যদিও আকাশ ধোঁয়াশায় মৃয়মান,
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
গলির মুখেই নোংরা-আবর্জনা,
বাস্তু নরকে নাগরিক আনমনা।
মোড়ের সেলুনে রেডিওর মুলতান।
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান।
কেটে নেয়া গাছ গুড়িটা রয়েছে পড়ে,
তাতে মেলে দেয়া রঙ্গিন লুঙ্গি ওড়ে।
রাস্তার কলে রিকশা ওয়ালার স্নান,
তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান। Read More
আমি অপেক্ষায় ছিলাম
আমি অপেক্ষায় ছিলাম
একটা সকালের, যে সকালে আলো ঝলমল করবে
গরম ধোঁয়া উঠা লাল চায়ে একটা আলতো চুমুক
জীবনে পাওয়া – না পাওয়ার হিসেবের খাতাটা ছুড়ে ফেলে
আমি হাঁটবো রাস্তায় , আমার সঙ্গী হবে এক রাশ আনন্দ
আমি অপেক্ষায় ছিলাম
একটা দুপুরের , সানকি ভরতি গরম ফেনা ভাত
সাথে বেগুন ভর্তা, ডাল আর কাচকি মাছে চচ্চড়ি
আমি আঙুল চেটে পুটে খাবো যেন অমৃত খাচ্ছি
দুঃখগুলো দূরে বসে আমাকে দেখবে
যেমনটা রাস্তার অভুক্ত কোন শিশু কাউকে খেতে দেখে
আমি অপেক্ষায় ছিলাম
একটা বিকালের, যে বিকালে আমি কোন মাঠে
অনেকে মিলে খেলবো বরফ পানি
বিকালের সোনারোদ আমার না পাওয়ার কষ্ট গুলোকে
গলিয়ে পানি করে দিবে
সেই পানি মিশে যাবে সবুজ দুর্বাঘাসে Read More
সিগারেটের দাম
দিন যায় সিগারেটের দাম বাড়ে। দাঁড়ি কিংবা নখও অত স্পিডে বাড়ে না সিগারেটের দাম যত স্পিডে বাড়ে। কমে মোবাইলের দাম, ব্যান্ডউইথের দাম। বাচ্চা বাচ্চা পোলাপানরা উচ্ছনে যাইতেছে মোবাইলে পর্ন আর হাবিজাবি টিকটক ভিডিও বানায় বানায়। দাম বাড়ানো উচিত মোবাইলের, ইন্টারনেটের। বছর দশেক আগেও ইন্টারনেট অনেক ক্লিন ছিলো। বালছাল পোলাপানের কাছে ইন্টারনেট এক্সেস কম ছিলো। কিন্তু যে যা খুশি করুক সিগারেটের দাম কমানোর কোন বিকল্প নাই। নীল স্বপ্নের নেশা করা ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিক থেকে শুরু করে চাকরী না পাওয়া বেকারের প্রধান খাদ্য যে বিড়ি। Read More
পারফিউম
ধানক্ষেত কিংবা ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ
অথবা শিশির ভেজা ঘাসের স্নিদ্ধ গন্ধটা
যতটা আমাকে টানে,
তোমার শ্যানেল ফাইভের গন্ধ ততটা কোনদিন ও টানেনি
তোমার ফ্রান্সের সব বিখ্যাত পারফিউমের কালেকশন
অনেকবার দেখিয়েছ আমাকে
অবাক হয়ে ভাবতাম এত দাম এগুলোর? সত্যি?
সারাদিন রাস্তায় গরমে হেটে বেড়ানো আমার গায়ের দূর্গন্ধ
ওসব দামি পারফিউমে কখনো যাবে না
যতবার ফিরে ফিরে এসেছি নিজের তৈরি নরকে Read More
নস্টালজিয়া
কাজলা দিদি কে কারো কি মনে পড়ে এখন আর ?
বাঁশবাগানই বা কোথায় এখন
চাঁদ তো শেষমেশ আলোদূষনের কাছে হার মেনেছে
নকশী কাঁথার মাঠ ফেলে রুপাই তো কবেই পালালো
সে মাঠে যে এখন আকাশচুম্বী ইটভাটার চিমনি
বিষাক্ত চিমনির ধোঁয়ায় যে আকাশ দেখাই ভার
সুরত আলির নাতিরা এখন আর পুথি পড়ে না
সস্তা হিন্দি গানের সুরে ভেসে আসে চাইনিজ মোবাইল থেকে
লখিন্দরের কপালটা অনেক ভালো ছিলো
এই কালে জন্ম হলে বেহুলা তার শব নিয়ে কি ভেলায় ঘুরতো ?
আর বিভূতিদার শঙ্কর কি করতো ?
ইবোলার ভয়ে হয়তো আফ্রিকায় আর পা-ই মাড়াতো না
দাদার কাছে বসে কি এই যুগের কোন নাতি
ডালিম গাছের তলে দেয়া দাদির কবরের গল্প শুনতো ?
দেবদাস তো পার্বতীকে ভুলেই যেত ইয়াবার ছোবলে
হাজার বছরের পুরনো রাত এখন বাড়ে না
এখন রাত বাড়ে অনিদ্রার ছোবলে
কাবুলিওয়ালার মিনি এখন কোথায় আছে কে জানে
গফুর ও যে সে রাতে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলো
কেউ তো তার আর কোন খবর ও নিলো না
হৈমন্তী কিংবা বিলাসীর দুঃখ গুলোকে
এখন আর কারো ছুতে ইচ্ছা করেনা
ওই দুঃখগুলো এখন অচ্ছুৎ
হয়তো শুধু আমার নস্টালজিয়ায় বার বার ফিরে আসে।
শেষ চিঠি
তোমাকে শেষ চিঠিটা লিখবো বলে
একটা ওয়াটারম্যান কলম কিনেছিলাম
আর আজিজ মার্কেট খুজে পেয়েছিলাম সুন্দর প্যাডটা
গোটা দশেক পাতা নষ্ট হলো
তারপর লিখতে পেরেছিলাম একটা চিঠি
গোটা গোটা অক্ষরে কিন্তু ভীষন অসুন্দর আমার লিখা
কিন্তু সব শেষে আর চাইছিলাম না তুমি চিঠিটা পড়ো
তাই ইচ্ছা করে ঠিকানাটা ভুল লিখলাম
তারপরেও খামে পুরে পোস্ট করেছিলাম ঠিকই
পোস্টম্যান ফেরত নিয়ে এসেছিলো চিঠিটা
এতসবের কি মানে ছিলো জানি না
হতো তুমি চিঠিটা পড়তেই না
মুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে জানলা দিয়ে
হয়তো বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি
নাকি চিঠিটা পড়তে তুমি ? Read More
লোডশেডিং
লোডশেডিং কি মিস করার জিনিস ? হারিকেন কিংবা মোমের আলো এক প্রকার হারিয়ে গেছে। সাথে করে নিয়ে গেছে সম্ভবত সুখগুলোকেও। মোমের আলোতে পড়ার সময় নিজের হাতে দুই-এক ফোঁটা হাতে ফেলতাম। নিজেরে অনেক বড় মর্দ মনে হইতো। হাতপাখা তো এখন আর কোথাও দেখিনা শুধু কমিশনার প্রার্থীদের মার্কা ছাড়া। শুধুমাত্র বাসার টেলিভিশনটাই সাদাকালো ছিলো। বাকি সব কিছুই রঙ্গিন। ক্লাস নাইনে ওঠার আগেই জুল্ভার্ন আর শার্লক হোমস যখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কখনো ওয়াটসন আবার কখনো ক্যাপ্টেন নিমো হয়ে কল্পনার ঘোড়াটা ছুটটো। শুক্রবার রাতের বেলা লুকিয়ে এক্স-ফাইলস দেখার সময় কখনো কখনো ফক্স মুল্ডার হতে চাইলেও ভূতের ভয়ে কল্পনাটা বেশি দূর আগাইতো না। বছরের প্রথম দিনে স্কুলে বাটার নতুন কেডস আর ব্যাগ কাঁধে ক্লাসে বসে নতুন বই পাওয়ার জন্য কি যে অপেক্ষা। বাংলা বইটা শেষ করতে সাত দিনের বেশি লাগতোনা কখনোই। বাকিগুলা বছর শেষেও শেষ হইতো না। Read More