imrul-net-dhaka

শহরটা জানে

Spread the love

সত্যিই কি বেচে আছি ? শ্বাস নেয়া মানেই কি বেঁচে থাকা ? স্যাতস্যাতে ভেজা এঁদো গলিতে কিংবা ফকফকা রোদে ঝিলমিল করা দুপুরে কোন ফুটভারব্রীজের উপরে দাড়িয়ে হটাত ভিজে ওঠা চোখ আর কেউ দেখেনি আমার শহরটা ছাড়া। আমার মনে হয় শহরটারও প্রাণ আছে। সব দেখে সে। সব বুঝে। কিছু বলতে পারেনা। বোবা একটা প্রাণী যেন আমার এই শহরটা। প্যারিসের মতন আর্টের পসরা নেই এই শহরে। চোখে খুলে যদি দেখো সর্বত্র হাহাকার। ফিটফাট সাদা শার্ট আর টাই পরে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেসেন্টিভ এর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা কোন বড় ডাক্তারের সাথে একটা ৫ মিনিটের একটা সাক্ষাতের জন্য। প্রিমিও গাড়িতে চড়ে এসি খেতে খেতে ঢাকা শহরের জ্যামকে গালি দেয়া তুমি জানো সেই রিপ্রেসেন্টিভ এর কষ্ট ? জানো না তুমি। কান্না চেপে রেখে মুখে হাসির রেখা তার। কিন্তু আমার শহর জানে। সেই জীর্ন-শীর্ন একটা বুড়ো কে কখনো দেখেছো রাস্তায় একটা আমলকির ঝাকার সামনে ঝিমাতে ? দুপুর গড়িয়ে গেল কিন্তু কিছুই বিক্রি হয়নি তার। লেটেস্ট মডেলের আইফোন আর ক্যাটস আইয়ের টিশার্ট পরা তুমি শহরটাকে নোংরা বলে ঠিকই পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছো সেই বুড়োকে। তার দীর্ঘশ্বাস তুমি শোননি। আমার শহরটা শুনেছে। এই শহর চাইলেই সিঙ্গাপুর কিংবা লন্ডন হতে পারবেনা। এত হাহাকার আর কষ্ট বুকে নিয়ে শহরটার সামর্থ্য নেই লাস ভেগাসের মতন অপরূপ রুপে সাজবে। এই শহরের সৌন্দর্য তার চেপে রাখা কষ্টে, নোংরা গলিতে সারা জীবনের সব সার্টিফিকেট হাতে চাকুরী না পাওয়া বেকার ছেলেটার গোল্ডলিফের টানে। বসুন্ধরা সিটি কিংবা যমুনা ফিউচার পার্কের ঝলমলে আলোতে তুমি এই শহরকে খুজোনা, পাবেনা। ভেবোনা এই শহরটা কোন নরক। নরক ভয়ঙ্কর। শহরটা বিষন্ন। খুব বিষন্ন। দীর্ঘশ্বাসে ভারী এখন এই শহরের বাতাস। বাতাসের দূষন তো খুব সহজেই মেপে ফেলো তুমি। গড়গড় করে বলে দাও এই শহরের বাতাসে শীসার পরিমান, কার্বন্ডাইওক্সাইডের পরিমান, আরো কত কি। বিষন্নতা কি মাপতে পারো তুমি  কিংবা তোমার সাইন্স?  দীর্ঘশ্বাসে বাতাস কত ভারী হলো সেটার খবর কে রাখে? কেউ না। তারপরো আমার শহর ভালবাসতে জানে। আমি শহরটাকে ভালোনাবাসলেও  শহরটা ঠিকই আমাকে ভালোবাসে। তোমাকেও ভালোবাসে। তুমি জানোনা। না জানাটা  দোষের না। সব কিছু জানতে হয় না। সব কিছু জানতে নেই।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *