তেপান্তরের-মাঠ

নিশাচর

আমি আর ফিরবোনা, যতই ডাকিস
রাস্তা ভুলে যাবো ইচ্ছা করে
তেপান্তরের মাঠটা এবার ঠিকই পাড়ি দিবো
তোকে ছাড়াই, একা একা
হয়তো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নামবে
রাত্তিরে আকাশে সেদিন চাঁদটাও থাকবেনা
জানি আমি ভয় পাবো ঠিকই
কিন্তু ফিরে আসবো না
কষ্টেরা কেন নিশাচর হয় বলতে পারিস ?
সারা দিন তো ওদের খুজেই পাইনা
রাত হলেই কোথা থেকে মাথাচড়া দিয়ে উঠে
আচ্ছা অশ্রু কেন নোনা হয় ?
বেদনার রঙ কেন নীল ?
ইচ্ছে করেই ভুল ঠিকনায় চিঠি পোস্ট কেন করি ? Read More

আমার শহর

আমার শহর তোমাকে দেখাবো একদিন
তুমি হেসে দিবে , বলবে শহরটাকি আমারো না?
হ্যাঁ, শহরটা তোমারো, আমারো, সবারই
কিন্তু কতটুক চিনো এই শহর কে তুমি ?
জ্যামে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে গোলাপ কিনো তুমি
সেই ময়লা ফ্রক পরা ছোট্ট  মেয়েটির কাছে থেকে
কখনো দেখেছো মেয়েটা কই থাকে?
হয়তো কাছেই কোন বস্তিতে তার বাসা
সেই বস্তির চিরস্থায়ী স্যাঁতস্যাঁতে কানাগলিতে
সূর্যেরও সেখানে সামান্য কিরণ পাঠাতে ঘেন্না করে
তুমি কি আমার সাথে যাবে সেখানে?
কিছুক্ষণের জন্য?

পুরো শহরটাই তো চিনো তুমি তাইনা ?
পিজ্জা-হাট থেকে র‍্যাডিসনের বুফে
কোথায় খাওনি ?
আবার হাসবে তুমি,
বলবে ভেলপুরি তোমার ভীষণ প্রিয়
কিংবা ফুচকা , ঝালমুড়ি আর যত স্ট্রীটফুড
আচ্ছা কখনো দেখেছো রিকশাওয়ালারা কোথায় খায়?
ভ্যানে ভাত বিক্রি হতে দেখেছো ?
আমার সাথে এক দুপুরে খাবে সেখানে ?
শুধু এক বেলা ?

318নিঝুমদ্বীপ

মৃত্যু

অমরত্বের আশা তো কখনোই করিনি আমি
মৃত্যুকেই চেয়েছিলাম আলিঙ্গন করতে
অবশেষে এসেছিল মৃত্যু আমার দুয়ারে
হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করিনি সত্য
দরজা বন্ধ করে তাড়িয়েও দেইনি মৃত্যুকে
অনেক অভিমান জমেছিল
এত দিন পর তার আসার সময় হলো ?
কত কত রাত অপেক্ষায় কেটেছে একা একা
ঝিঁঝিঁ আর হুতুম প্যাঁচার  ডাক শুনে কেটেছে সময়
চোখের জল, সেটাও তো শুকিয়ে গিয়েছিল
ভয় করছিল, অপেক্ষা করতে করতে করতে
কখন না যেন আমি নিজেই অপেক্ষা হয়ে যাই
শেষ পর্যন্ত আমাকে দেখা দিয়েছিল মৃত্যু
দুপুরের তপ্ত রোদেও যেন সেদিন
হিমাঙ্কের নিচে নেমেছিল তাপমাত্রা
মৃত্যুর চোখে তাকানোর সাহস হয়নি আমার
শুধু তাকে অনুসরণ করেছিলাম মাত্র
জানতাম সময় ফুরিয়ে এসেছে । Read More

ডিসেম্বারের বৃষ্টি

ডিসেম্বারের তীব্র শীতে
কেউ কি বৃষ্টি চায়
কান্না বুকে চেপে রেখে
শান্তি ক’জন পায় ?

ঝাপসা চোখ, ঝাপসা শহর
ঝাপসা যখন মন
ভাবি তোমার কাছেই থেকে গেছে
সব ভালো লাগার ক্ষণ

আবার ফিরি বাস্তবেতে
ভাঙলো বুঝি কাঁচ
আগুনের মতই গরম
বাস্তবতার আচ

Khoma-Koro-Sanjhbati-Dev-Paoli-Anupam-Roy

ক্ষমা করো আমি ভালো নেই – Anupam Roy

ক্ষমা করো আমি ভালো নেই
এলোমেলো হয়ে গেছি
যেন সব হারিয়েছি
হে বসন্ত বিদায়

ক্ষমা করো আমি ভালো নেই
এলোমেলো হয়ে গেছি
যেন সব হারিয়েছি
হে বসন্ত বিদায়

পথে পড়ে থাকা মন খারাপ
চুপি চুপি খুঁজে নেয় নির্বাসন
স্মৃতিটুকু ধুয়ে গেছে পায়ের ছাপ
মনে পড়ে যায় আজ তার শাসন Read More

A-Place-Where-Dreams-Reality-Collide

স্বপ্ন

রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা তো সেই কবেই ছেড়ে দিলাম
তেপান্তরের মাঠও আমার কোনোদিন দেখা হবে না
মডার্ন অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতে না কার্নিশ নেই
চুড়ই ও বাসা বানায় না তাই
নিষ্পলক দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে থাকি আর ভাবি
কেউ কি আমাকে একটা রাজকন্যার নূপুর দিতে পারো ?
কিংবা পলাশের বনের পাশে একটা কুড়ে ঘর?
চাইনা আমি তোমাদের বূর্জ খলিফা
তোমাদের পরিপাটি বেশভূষা তোমাদের কাছেই থাক
আমাকে একটা ভাঙ্গা নৌকাই না হয় দিয়ো
চাদনী রাতে কোন বিলের ধারে নৌকায় শুয়ে ব্যাঙের ডাক শুনবো
বিশ্বাস করো তোমাদের এটিএম বুথের টাকার কড়কড়ে শব্দের চেয়ে
ঝিঝিপোকার ডাক আমার অনেক বেশি প্রিয়
তোমার ধোপদুরস্ত কালচার টা তোমার কাছেই রেখো

Read More

maxresdefault

দুঃখবিলাসের ব্যাবচ্ছেদ

ম্যানকাইন্ড তথা মানুষ্যজাতি সবচেয়ে উপভোগ করে কোন বিষয়টা ? উপভোগ করার মত জিনিষের কি অভাব আছে? সফলতা, ক্ষমতা, মদ, সেক্স , ড্রাগস সহ হাজারো জিনিস। এই সব কিছুই উপভোগ করার জিনিষ। কারো ভালোলাগে নারীসংগ কারো বা ক্ষমতা। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে মানুষ সব চেয়ে বেশি উপভোগ করে নিজের দুঃখ গুলো। সম্ভবত এই জন্যই দুঃখবিলাস শব্দটার উৎপত্তি। বাংলা সাহিত্যের সব চেয়ে বিখ্যাত প্রেমের উপন্যাস কোনটা? উত্তরটা সম্ভবত দেবদাস। আর ইংরেজি সাহিত্যে? ঠিক ধরেছেন রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট। দুটোই কিন্তু ট্রাজেডি। দুঃখের উপন্যাস যত সহজে মনকে নাড়া দিতে সক্ষম একটা হ্যাপী এন্ডিং এর বই কি ঠিক ততটা পারে? শুধু প্রেমের গল্পই না, যদি জীবনের অন্য দুঃখ গুলোর দিকে তাকান, সেখানেও দেখা যাবে বাজারে দুঃখের গল্পের জয়। লা মিজেরাবেল ফারাসি সাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত উপন্যাস গুলোর একটা। এটার ভিতর যেন  দুঃখের একটা সুবিশাল খনি। একটু ভেবে দেখুন তো টাইটানিক সিনেমায় নায়কের মৃত্যু না হলে সেটা কি আপনার মনে গেথে থাকতো ? ম্যাক্সিম গোর্কির মা বইটার পাতায় পাতায় সম্ভবত দুঃখের জলছাপ। সত্যি বলছি দুঃখের মতন উপভোগ অন্য কোন কিছুকে করা সম্ভব না। কখনোই না। গভীর রাতে লঞ্চের ডেকে চাঁদের দিকে তাকালে কিংবা সমুদ্রের কিনারে Read More

c-o-sir

c/o স্যার

শুধু মাত্র শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অতিমানবিক অভিনয়ের জন্যও সিনেমাটা কয়েকবার দেখা যায়। অন্ধ হয়ে যাওয়া একজন সামান্য স্কুল টিচার কিন্তু তার অন্তর্দৃষ্টি আসে পাশে মানুষগুলোর চেয়ে অনেক গুনেই বেশি। থ্রিলার ধাচের সিনেমাটায় নেই কোন বড় ক্লাইম্যাক্স, মারামারি কিংবা খুব বড় কোন প্লট। একজন অন্ধ স্কুল টিচারকে নিয়ে কতোটুকই বা আগানো যায়? কিন্তু কৌশিক গাঙ্গুলির মুভি বলে কথা। দুর্দান্ত কিছু ক্যামেরা শটস সাথে একজন অন্ধ মানুষের ক্রমান্বয়ে সব কিছু হারিয়ে ফেলা। শেষ সম্বল স্কুলটা। যেটাও তার নিজের নয়। এতো কিছু সত্ত্বেও যেন হার মানতে নারাজ জয়ব্রত (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। কিছুতেই তিনি স্কুলটাকে শহর থেকে আসা ক্যাপিটলিস্টদের হাতে তুলে দিবেন না। মডার্ন বড় স্কুল বলে কিছু হয়না। তাই এক সময় জয়ব্রতের কন্ঠে ফুটে উঠে  “বড় স্কুল বলে কিছু হয় না। All you need is a blackboard and a teacher.” । ফলে গোটা স্কুল কর্তৃপক্ষ, উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা এবং স্থানীয় স্বার্থচক্র এক দিকে, অন্য দিকে একা, অন্ধ ও অনড় জয়ব্রত। কতক্ষন ধরে লড়বেন একা?

শুরুর দৃশ্য থেকেই পরিচালক এবং সিনেমাটোগ্রাফারকে কুর্ণিশ, শাশ্বতর চাঁচাছোলা মুখ সামনের চেয়েও বেশি সাইড অ্যাঙ্গল থেকে দুর্দান্তভাবে শুট করার জন্যে। ফায়ারপ্লেসের পটভূমিকায় কালো চশমা পরে কানে ফোন ধরা শাশ্বতর শট অসাধারণ। গল্পের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি শিক্ষক জয়ব্রত রে, রায় নন। পাহাড়ের বয়েজ স্কুল, তার মধ্যে দারুণ সুন্দর এক কটেজ, ঝকঝকে দৃশ্যাবলী আপনাকে ছবিটা দেখতে বেশ আগ্রহী করে তুলবে।

ছবিতে একবারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি অভিনয় করছেন, একবারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি অন্ধ নন। হাঁটাচলা থেকে তাকানো এবং ডায়লগ ডেলিভারি অসামান্য। রাইমা সেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অভিনয় এবং ইউনিক  উচ্চারণ নিয়ে চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গেছেন।

The Telegraph এর  সমালোচনায় দেখলাম বরুণ চন্দ লিখেছেন, ‘He has stopped acting. He is Jayabroto Ray.’
Read More

imrul-net-dhaka

শহরটা জানে

সত্যিই কি বেচে আছি ? শ্বাস নেয়া মানেই কি বেঁচে থাকা ? স্যাতস্যাতে ভেজা এঁদো গলিতে কিংবা ফকফকা রোদে ঝিলমিল করা দুপুরে কোন ফুটভারব্রীজের উপরে দাড়িয়ে হটাত ভিজে ওঠা চোখ আর কেউ দেখেনি আমার শহরটা ছাড়া। আমার মনে হয় শহরটারও প্রাণ আছে। সব দেখে সে। সব বুঝে। কিছু বলতে পারেনা। বোবা একটা প্রাণী যেন আমার এই শহরটা। প্যারিসের মতন আর্টের পসরা নেই এই শহরে। চোখে খুলে যদি দেখো সর্বত্র হাহাকার। ফিটফাট সাদা শার্ট আর টাই পরে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেসেন্টিভ এর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা কোন বড় ডাক্তারের সাথে একটা ৫ মিনিটের একটা সাক্ষাতের জন্য। প্রিমিও গাড়িতে চড়ে এসি খেতে খেতে ঢাকা শহরের জ্যামকে গালি দেয়া তুমি জানো সেই রিপ্রেসেন্টিভ এর কষ্ট ? জানো না তুমি। কান্না চেপে রেখে মুখে হাসির রেখা তার। কিন্তু আমার শহর জানে। সেই জীর্ন-শীর্ন একটা বুড়ো কে কখনো দেখেছো রাস্তায় একটা আমলকির ঝাকার সামনে ঝিমাতে ? দুপুর গড়িয়ে গেল কিন্তু কিছুই বিক্রি হয়নি তার। লেটেস্ট মডেলের আইফোন আর ক্যাটস আইয়ের টিশার্ট পরা তুমি শহরটাকে নোংরা বলে ঠিকই পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছো সেই বুড়োকে। তার দীর্ঘশ্বাস তুমি শোননি। আমার শহরটা শুনেছে। এই শহর চাইলেই সিঙ্গাপুর কিংবা লন্ডন হতে পারবেনা। এত হাহাকার আর কষ্ট বুকে নিয়ে শহরটার সামর্থ্য নেই লাস ভেগাসের মতন অপরূপ রুপে সাজবে। এই শহরের সৌন্দর্য তার চেপে রাখা কষ্টে, নোংরা গলিতে সারা জীবনের সব সার্টিফিকেট হাতে চাকুরী না পাওয়া বেকার ছেলেটার গোল্ডলিফের টানে। বসুন্ধরা সিটি কিংবা যমুনা ফিউচার পার্কের ঝলমলে আলোতে তুমি এই শহরকে খুজোনা, পাবেনা। ভেবোনা এই শহরটা কোন নরক। নরক ভয়ঙ্কর। শহরটা বিষন্ন। খুব বিষন্ন। দীর্ঘশ্বাসে ভারী এখন এই শহরের বাতাস। বাতাসের দূষন তো খুব সহজেই মেপে ফেলো তুমি। গড়গড় করে বলে দাও এই শহরের বাতাসে শীসার পরিমান, কার্বন্ডাইওক্সাইডের পরিমান, আরো কত কি। বিষন্নতা কি মাপতে পারো তুমি  কিংবা তোমার সাইন্স?  দীর্ঘশ্বাসে বাতাস কত ভারী হলো সেটার খবর কে রাখে? কেউ না। তারপরো আমার শহর ভালবাসতে জানে। আমি শহরটাকে ভালোনাবাসলেও  শহরটা ঠিকই আমাকে ভালোবাসে। তোমাকেও ভালোবাসে। তুমি জানোনা। না জানাটা  দোষের না। সব কিছু জানতে হয় না। সব কিছু জানতে নেই।

IMG_20190419_072920

দেখা হবে

তোর সাথে আমার আবার একদিন দেখা হবে
কোন আলো ঝলমল করা শপিং মলে না
হয়তো হাইওয়ের পাশে কোন চায়ের দোকানে
স্বামীর কাছে বায়না ধরে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে
রেডিও তে বাজছে কোন অনুরোধের গান
তখনই হয়তো আমার চোখে চোখ পড়বে তোর
জানি সুন্দর ভাবেই এড়িয়ে যাবি
আমার বুকটাও হয়তো একটু কেঁপে উঠবে
পরক্ষনেই সব ঠিক, হাতে সেই করা লিকারের চা
সাথে সস্তা একটা সিগারেট
তুই তো চলেই যাবি, দামি গাড়িতে চড়ে
আমিও সিগারেটটা শেষ হতেই  উঠে পড়বো
এখনো যে সেই দুই চাকার সাইকেলেই পড়ে আছি
ছেঁড়া জিন্স, পাতলা টিশার্ট থেকে বের হয়ে
আমার যে আর সাহেব হওয়া হলো না