সেথান ভ্যালি – মানলির গভীরে প্রায় অনাবিষ্কৃত এক টুকরো রত্ন

Spread the love

শেষ রোজার ইদ থেকেই ভারত যাওয়ার প্ল্যানিং করতেছিলাম আমি আর আমার বয়েসে জুনিয়র কিন্তু অফিসে সিনিয়র কলিগ সাদু (সাদমান) এর সাথে। কিন্তু কুত্তামারা প্রেশার আর সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ায় ট্যুর পেছাতে পেছাতে কুরবানির ইদ চলে আসলো। এবার আর মিস দেয়া যাবেনা। রবিবার ইদ হওয়ায় কোন মতে বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি ম্যানেজ করলাম। টার্গেট কোলকাতা হয়ে দিল্লি, আর দিল্লি থেকে মানালি।

কোলাকাতা থেকে ফ্ল্যাইট ধরে সোজা চলে এলাম দিল্লী। এখানে একটা চিট বলে দেই। পুরোটা ট্যুরে আমরা Make My Trip অ্যাপ দিয়ে সব ফ্ল্যাইট, বাস, ট্রেন টিকেট করেছি। সব সময়েই টিকেট এর দাম লোকাল এজেন্ট আর আমার বাংলাদেশী ট্র‍্যাভেল এজেন্ট এর থেকে কম ছিলো। আর ট্র‍্যানজেকশন ছিলো রুপি তে। মাল্টি কারেন্সি কার্ড থেকে ডলারে না কেটে সোজা রুপিতে পে করায় আমাদের খরচ আরো কম হচ্ছিলো। বলে রাখা ভালো এটা MakeMyTrip এর কোন পেইড প্রোমোশন না।

দিল্লী থেকে মানালির বাস ধরবো তাই ফ্ল্যাইট থেকে নেমে আর কোন হোটেল বুক দেইনি। দিল্লীতে কয়েকটি পয়েন্ট থেকে বাসের টিকেট পাওয়া যায়। ISBT Kashmere Gate, Majnu Ka Tila আর  RK Ashram Marg. এর মধ্যে ISBT Kashmere Gate এ সরকারি বাস HRTC ( Himachal Road Transport Corporation)   এর টিকেট পেয়ে যাবেন সুলভ মূল্যে। যদি একটু আরামে যেতে চান তাহলে Majnu Ka Tila কিংবা  RK Ashram  Marg থেকে কাটতে পারবেন। তবে দালালের সাথে কোন ধরনের ডিলে যাবেন না। ভালো বাস,  সেমি স্লিপার বলে ভাংগারিতে তুলে দেবে ( আমরা এই ভুলটি করেছিলাম)। সব চেয়ে ভালো RedBus, MakeMyTrip,  HRTC  অথবা HPTDC এর অনলাইন পোর্টাল থেকে টিকেট কাটা। বাসের টিকেট কাটার সময় রেটিং দেখেও বুঝে নিতে পারবেন কোন বাসটি কেমন।

যাই হোক বাস জার্নি দুনিয়ার সব চেয়ে বোরিং আর ডিসগাস্টিং জার্নি গুলার একটা। তার মধ্যে জুটছিলো একটু লক্কর ঝক্কর এসি বাস। যাত্রা শুরুর পর রাস্তায় Shiva Dhaba তে রাত ১ টায় বাস থামে। ধাবার মেন্যু দেখে মাথার ঘাই কুত্তা পাগল অবস্থা আমার। যদিও ভেজ ধাবা তবুও ট্রাই করার মত অনেক কিছুই ছিলো। ভেজ ফ্রাইড রাইস আর চিজ ন্যুডুল অর্ডার করলাম।

Shiva-Dhaba
শিবা ধাবার পনির চাউমিন আর ভেজ ফ্রাইড রাইস

শিবা ধাবার পনির চাউমিন আর ভেজ ফ্রাইড রাইসশিবা ধাবার পনির চাউমিন আর ভেজ ফ্রাইড রাইসতারপর আবার বাস জার্নি। সকাল ৮ টায় পৌছানোর কথা থাকলেও রাস্তা মেরামতের কাজ থাকায় পৌছালাম দুপুর ১ টার দিক।  মধ্যে বাসেই বুকিং ডট কম অ্যাপে একটা Homestay তে বুকিং দিলাম। Homestay আর হোটেল এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। সাধারণত Homestay তে হোটেলর মত এতো সুযোগ  সুবিধা পাওয়া যায় না কিন্তু  বেশ কমে থাকা যায়। আমরা চিচোগা গ্রামের ভিতরে একটা Homestay তে উঠলাম। পাহাড়ের বেশ উপরে হওয়ায় খুবই সুন্দর একটা ভিউ পাচ্ছিলাম। প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকায় সেদিন আর কোথাও যাইনি।  বারান্দায় বসে বসে পাহাড়ের রূপ দেখলাম।

পরের দিন আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখলাম। ইদের দিন থাকায় মুসলিম হোটেল গুলো বন্ধ ছিলো। ঠিক তখনই একটা দোকান চোখে পরলো নাম বাবুমশাই (মাথায় বেজে উঠলো রাজেশ খান্নার বিখ্যাত ডায়লগ  জিন্দিগি বাড়ি হনি চাহিয়ে বাবুমশাই , লম্বি নেহিন ) । দোকানের মালিক কোলকাতার এক দম্পতি। খেতে খেতে উনাদের সাথে কথা বলছিলাম। সেইখানেই দাদা সাজেস্ট করলেন সেথান ভ্যালি । এর আগে কখনো এই ভ্যালির নাম শুনিনি। খেয়ে আশে পাশের কয়েকটি স্পট ঘোরার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত নিলাম সেথান ভ্যালি যাওয়ার।

মানালিতে গেলে দিদির বাবুমশাই হোটেলের দাদার হাতের খাবার খেয়ে আসতে ভুলবেন না

মানালিতে গেলে দিদির বাবুমশাই হোটেলের দাদার হাতের খাবার খেয়ে আসতে ভুলবেন নাএকটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম ২৫০০ রুপিতে। ট্যাক্সি ওয়ালা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন । পথে   Hampta Pass trek এর জন্য ২০০ রূপি দিতে হলো।  Hampta Pass trek  এর নাম আগে শুনে থাকলেও সেটা যে সেথান ভ্যালিতে তা জানা ছিলোনা। রাস্তায় ছবি তোলা মানা ছিল কারন সেখানে পাওয়ার স্টেশন সহ আরও কিছু প্রজেক্ট চোখে পরলো। মানালি মল রোড থেকে সেথান ভ্যালি এর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটারের কিছু বেশি। সেথান ভিলেজ  চোখে পড়লো কিছুক্ষণ পর। তারপর গাড়ি থামিয়ে আমাদের পদব্রজে যাত্রা শুরু সেথান ভ্যালি তে।

সেথান ভ্যালি এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বিষয়টা তা না। আমরা গরমের মৌসুমে মানালি এসেছি তাই স্নো-ফল দেখিনি। আসে পাশে যা যা ঘুরে দেখেছিলাম তার মধ্যে সেথান ভ্যালি টাই ভালো লেগেছে সব চেয়ে।  Hampta Pass trek  কমপ্লিট করার ইচ্ছা থাকলেও সময় কিংবা সুযোগ কোনটাই ছিল না। পাহাড় আর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে দিয়ে হাটতে হাঁটতে দূরে একটা  ছোট্ট হলুদ রঙের ছাউনি দেয়া দোকান চোখে পরলো।

আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড সেখানে নিয়ে আমাদের কফি বানিয়ে খাওয়ালো নিজ হাতে। কফি খেতে খেতে কাছে  একটা পাহাড়ি নদীর / ঝর্নার শব্দ শুনলাম। সামনে একটা কাঠের ব্রিজ দেখে লাফিয়ে পার হয়ে আবার ফেরত আসলাম। দূরে পাহড়ের চূড়ায় বরফ দেখা যাচ্ছিলো। ইস! যদি হাঁটতে হাটতে চলে যেতে পারতাম সেখানে আর ফেরত আসা লাগতো না   …


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *