ঋত্বিক-চক্রবর্তী

ধন্যবাদ স্যার ,ধন্যবাদ ঋত্বিক চক্রবর্তী

Spread the love

আপনাকে অনেক দিন ধরেই একটা চিঠি লিখবো বলে ভাবছিলাম। ঠিক লিখতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম আরেকটু অপেক্ষা করে নেই। যদি আরেকটু বেশি কিছু অভিনয় দেখতে পাই।

“আমি আর কি করতে পারি এ ছাড়া ?
আরে তুই তো শিল্পী
নাচ, গান, আঁকা, লেখা, অভিনয় কোনটা পারি?
আরে তুই তো না খেয়ে থাকতে পারিস !!! “

আর প্রতিবারই… প্রতিবারই আপনি অপেক্ষার নতুন কারণ দিয়ে যাচ্ছেন। আজকের এই বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একজন অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী, অত্যন্ত ভালো একজন অভিনেতার মতন প্রশংসার জন্য এই চিঠি নয়। এই চিঠি একটি মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি ছেলের। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবেনা? যাদের জীবন আপনি বার বার তুলি দিয়ে এঁকেছেন নিজের সাবলীল অভিনয়ে। অনেক ধন্যবাদ স্যার, ধন্যবাদ বেশি চেষ্টা না করার জন্য। বেশি চোখের জল না ফেলার জন্য। বেশি পেশিবহুল না হওয়ার জন্য। আর হ্যাঁ মাথায় কম চুলের জন্যও। আপনি ঠিক আমাদের মতন স্যার। আপনার এই না থাকা গুলোই আপনার মুকুটের পালক। আর থাকার মধ্যে যেটুকুন অভিনয় আছে সেটা দেখলেই রাতে ডিনার না করলেও চলে। সৃজিত মুখার্জী কোথাও যেন বলেছিলেন “ঋত্বিক Doesn’t act. He behaves.” ধন্যবাদ স্যার, ধন্যবাদ বেশি পেছন পাকা জেঠু মার্কা অভিনেতা না হওয়ার জন্য। ধন্যবাদ খুব বড় অভিনয় বোদ্ধা না হওয়ার জন্য। ধন্যবাদ প্রতিটা সিন কে একটু খেলার ছলেই নেওয়ার জন্য। Stanislavski কিংবা নাট্যশাস্ত্রে আপনি ঠিক কতটা শিক্ষিত সেটা আমার জানা নেই। তবে আপনার অভিনয়ে যেই গা ছাড়া ভাবটা আছেনা সেটা অনেকটা আমাদের রোজ নামাচা জীবনের মতন। যত বেশি সিরিয়াস তত বেশি সমস্যা। শুনেছিলাম সত্যজিৎ রায় নাকি তার ক্যারিয়ারের মধ্য গগণে ফেলুদার মতন শিশু সাহিত্য লিখার সিদ্ধান্ত নেন। হয়তো উনিও নিজেকে একটু কম সিরিয়াসলিই নিতেন। তাই আজ তিনি কাল্ট। আপনি সেই পথের পথিক কিনা সেতো সময়ই বলে দিবে। আপাতত আপনার মাছে ঝোলটা খেতে বেশ ভালোই হলো। যাক আপনার এই সাধারণ আর সাবলীল অভিনয়ের পিছনে হয়তো অনেক অভ্যাস আছে। জড়তা কাটানোর জন্য হয়তো অনেক খারাপ অভিনয়ও আছে। আজ খুব সাধারণ কিছুর দাম যে খুব বেশ বেশি হতে পারে সেটা আপনার পর্দার চরিত্র আর আপনি দুজনেই হাতে হাত ধরে প্রমাণ করেছেন। আমার মনে হয় প্রতিটা সময়ের কিছু অভিনেতা থাকেন যাদের জন্য পর্দায় চরিত্রদের পরিধি বাড়ে। যাদের জন্য একজন নামহীন ভায়োলেন্ট প্লেয়ার কিংবা একজন ফলি আর্টিস্ট পর্দায় জায়গা করে নেয়। যাদের জন্য ভোরের প্রথম আলো, কুয়াশা ঘেরা জঙ্গল , পেঁচার ডাক, কিংবা হোমিওপ্যাথির কাঁচের শিশি পর্দায় চরিত্র হওঁয়ে ওঠে। যাদের অন্য পায়ের ছাপ, তারে বসা কাক, আর মাছের ঝোলের পরিরা পোস্টার বয় হয়। আপনি সেই গোত্রের অভিনেতা। আপনি সেই গোত্রের অভিনেতা যাদের জন্য মৃত দেহরা পর্যন্ত প্রেমে পড়ে। শব্দ রা নিঃশব্দে কোথা বলে। আপনি সেই সমস্ত অসমাপ্ত চরিত্রদের মতন যারা পাহাড়ের বাকে নিজেদের জন্য ঠিকানা খুঁজে নেয়। আপনি মাঠের ধারের বেঞ্চে বসে থাকা সেই ব্যাক্তিদের মতন যারা রঙ মেখেও বাস্তবের মতন বাস্তব আর হেরে যাওয়ার মতন খুব চেনা। এতো গুলো বছর ধরে বর্ষীয়ান দের ভিড়ে কখনো হারানতো নি বরঞ্চ আরও বেশি করে উঠে এসেছেন বার বার। প্রথম অনভিজ্ঞ পরিচালকদের প্রথম স্ক্রিপ্টের প্রথম চয়েস সব সময় আপনি থাকবেন স্যার। আজ এই স্বল্প মেয়াদি ক্ষণস্থায়ী শিল্পে আপনার অভিনয় সত্যিই কাল্ট। শব্দ, আসা যাওয়ার মাঝে, অনুব্রত ভালো থেকো কিংবা বাকিটা ব্যাক্তিগত শুধু আপনার অংশগুলোকে একাধিক বার দেখেছি। আপনি ঠিক এইভাবেই নিজের ট্রাফিজের খেলা দেখাতে থাকুন। আপনার চলচ্চিত্র সার্কাসে একটা নিউ নর্মাল অভিনয় ধারার বাঁশিওয়ালা… অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার ,ধন্যবাদ ঋত্বিক চক্রবর্তী


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *