আমার রুট টা একবারে গেরস্ত। কাকা চাচা সবাই কৃষিকাজ করে। আমার দাদাজান নাকি পড়াশোনা করা একবারেই পছন্দ করতেন না। আব্বায় লেখা পড়া করতে নাকি বাড়ি পর্যন্ত ছাড়ছিল। ছোট বেলায় এসব যখন শুনতাম মেজাজ খারাপ হইত। মনে হত দাদার সাথে যদি দেখা হইত ইচ্ছা মতন ঝারতাম। শালা মূর্খ বইলা কি সবাইকেই মূর্খ থাকতে হবে ? এত সুন্দর শহুরে জীবন। তা বাদ দিয়া গেরামে মাঠে ঘাটে কাজ? সিরিয়াসলি ? টিভি নাই, মুভি নাই, বার্গার নাই এমন একটা লাইফ !! মনে মনে কইতাম আল্লাহ বাচাইসে বাপে আমার পড়ার লেইগা ঘর ছাড়ছিল। রঙিন ছিল সব। বুঝতে সময় লাগলো। আসল রঙটা দেখলাম , একটু দেরিতেই। আমার দাদা যা বুঝেছিল ৬০ বছর আগে সেটা উপলদ্ধি করলাম। অল্প একটু অর্থ, সামান্য বিনোদন, আর একগাদা রঙিন স্বপ্নের (মরিচিকা বলাই ভাল) বিনিময়ে সুখটাই ছিনিয়ে নিয়েছে এই শহুরে জীবন। যখন আমার রুটের মানুষ গুলো দেখি , যাদের এক সময় এক প্রকার ঘেন্নাই করতাম এখন রিতিমত ঈর্ষা করি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাঠে চলে যাওয়া, বিকালের মধ্যে সব কাজ শেষ বাড়ি ফেরা, গোসল করে বাজারে গিয়ে চা সিগারেট খাওয়া। আর ইশার পরেই ঘুমিয়ে পড়া। তারা হাজার টাকা দামের মেক্সিকান পিজা চিনে না, চিনে না ইটালিয়ান স্পেশাল সস মারা পাস্তা। নদীর টাটকা মাছ কিনবা দেশি মুরগির আলু দেয়া ঝোলের সাথে মোটা চালের ভাত। স্ট্যাটাস মেন্টেন করার কোন বালাই নাই। আমাকে যদি জিগ্যেস করা হয় যদি আমি অদের লাইফটা এত পছন্দই করি তবে কেন গেরামে গিয়া খেত খামার করিনা কেন? আসলে আমি নষ্ট হয়ে গেছি। মানিয়ে নিতে পারি নাই শহরের সাথে। অভ্যস্ত নই একবারে সাদামাটা মাঠে ঘাটের সেই জীবনের সাথে। মোদ্দা কথা আমি কুলের ও না , ঘাটের ও না। জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করে বাবাকে কেন সে শহরে এসেছিল। ভালই থাকতাম আমরা সেখানে। অনেক ভাল। হয়তো খুব বেশি ভালোনা। কিন্তু শহুরে কয়েদখানার চেয়ে ভালো। কোন কিছুই আমাকে এখানে আর টানে না। জীবনে একটা জিনিস খুব ভাল মতন জানছি। যত কম জানবে, যত কম শিখবে, যত বোকা থাকবে তত ভালো থাকবে।
খরচ হয়ে যাচ্ছে জমানো বাকি দিন
খরচ হয়ে যাচ্ছে যত আশা ছিল ক্ষীণ