নাবিককে কখনো কোন নারীর প্রেমে পড়তে হয়না। নাবিক প্রেমে পড়বে সমুদ্রের। প্রিয়তমার খোলা চুলে নয়, সে ভালোবাসা খুঁজবে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে। সংসারে বাধা পড়ার জন্য যে জন্ম হয়নি তার। জানিনা নাবিক সিন্দাবাদ কোনদিন প্রেমে পড়েছিল কিনা। কিন্তু তার প্রথম প্রেম যে ছিলো সমুদ্র সেটা যে বলার অপেক্ষা রাখে না। সমুদ্রের প্রেমে যে পড়বে তাকে অন্য কেউ ফেরাতে পারবে না। কোন নারীর চোখের ভাষা পড়তে না পারলেও রাতের তারা গুলো কিন্তু পড়তে কোন ভুল করেনা সে। কখনো কখনো সমুদ্রতাকে দু’হাত ভরে দেয়। কখনো বা কেড়েও নেয়। ঝড়ের কবলে পড়ে ভেঙ্গে ডুবে যাওয়া জাহাজের একটা তক্তা ধরে জনমানবহীন কোন দ্বীপে হয়তো আশ্রয় হয় তার। কিন্তু সত্যিকারের নাবিক কখনো হাল ছেড়ে দেয় না। হয়তো সামান্য ভেলা বানিয়েই আবারো অনিশ্চত সমুদ্রে ঝাপ দেয় সে। নিজের চেয়েও ভালো চিনে সে সমুদ্রকে। নোনা জলের মাঝেই তার বসতবাড়ি। নোনা জলের মাঝেই তার জীবন। জুল্ভার্নের অমর চরিত্র ক্যাপ্টেন নিমো সমুদ্রের প্রেমে বিভোর ছিল। সাবমেরিন নটিলাসে চড়ে চষে বেড়িয়েছিলো পুরো পৃথিবী। সমুদ্র থেকে সবটুকু নিতে পেরেছিলো ক্যাপ্টেন নিমো। পেরেছিলো নাবিক সিন্দাবাদ ও। প্রায় প্রতিবার কোনমতে জীবন নিয়ে ফিরে আসা সিন্দাবাদ বার বার ফিরে গেছে সমুদ্রের কাছে।
সমুদ্র, নাবিক সিন্দবাদ আর ক্যাপ্টেন নিমোর কথা চিন্তা করতে করতে আমি যেন ক্রমশ সরে যাচ্ছি আধুনিক পৃথিবী থেকে। অনেক আগের কোন একটা পৃথিবী তে। দুই কাঁধ থেকে যেন সব জঞ্জাল ঝরে পড়ে গেলো। আমি যেন একটা মুক্ত আত্মা। যার কোন পিছুটান নেই। সামনে অন্তহীন সমুদ্র। যে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার আগেই যে মৃত্যু ঘটবে নিশ্চিত। কিন্তু সেটা আমার কল্পনাতেও নেই। শপথ নেয়া কোন বীর নাইটের স্বপ্ন যেমন যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু তেমনি নাবিকের স্বপ্ন হয়তো নোনা জলে সলিল সমাধি। কি বিষণ্ণ সমুদ্র। কি বিষণ্ণ তার আবেদন। কি বিষণ্ণ সব !!