দেখো দেখি কান্ড

দেখো দেখি কান্ড!

Spread the love

নব্বই এর দশক। গোলকপাল লেন। একটা কানাগলি। সূর্যের আলো অনেক কষ্টে ঢুকলেও সবজিওয়ালার ভ্যান ঢুকে যায় অনায়সে। গলির শেষ মাথায় একটা চারতলা বাড়ি। স্যাতস্যাতে জীর্ণ বাড়িটার ছাদে একটা চিলেকোঠা। সেখানে কোন সেপাই থাকেনা। থাকে সদ্য বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করা এক দম্পতি। বাড়িওয়ালা ভাড়া দিবোনা দিবোনা বলেও দিয়ে দেয় ভাড়া। মায়া লাগে ছেলে মেয়ে দুটোকে দেখে। ভাড়া দেয়ার আগে কয়েক বার যাচাই করে নেয় কাবিননামা। তারপর সেই স্যাতস্যাতে ছাদে দুই টোনাটুনির সংসার। মাত্র ইন্টার পাশ ছেলেটার কাছে অল্প কিছু জমানো টাকা। পুরোটাই টিউশানি করে জমানো। আর মেয়েটা? জানেই না দাম্পত্যের মানে! জানেনা কিভাবে টাকা বাচিয়ে সংসার চালাতে হয়। শিল্পপতি বাবার সব চেয়ে আদরের ছোট মেয়েটা কিভাবে এই ভীষন মধ্যবিত্ত ছেলে টার প্রেমে পরলো সেটা বুঝার জন্য ফ্রয়েড সাহেবের কাছেই যেতে হবে। ছেলেটা বাসায় বড় ভাইকে বলে এসেছে। এক বন্ধুকে বলে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকুরী জুটিয়ে নেয় ছেলেটা। বেতন কম হলেও বাজার খরচ আর বাড়ি ভাড়া কভার হয়ে যাবে ভেবে খুশি হয় দুজনেই। ছেলেটা যখনই অফিসের জন্য বের হয়ে যায় মেয়েটার খুবই বিষন্ন লাগে। আরেকটা লম্বা দিন একা একা কাটবে তার। পরিবারের কথা মনে পরতেই ভীষন কান্না পায়। কান্না পায় তার ভালোবাসার মানুষটার জন্যও। কিন্তু সন্ধ্যায় যখনি বাসায় ফিরে ছেলেটা, সব দুঃখ যে কোথায় গায়েব হয়ে যায় কে জানে! মাসখানেক এভাবেই চলছিলো। হয়তো বছরো চলে যেত কিন্তু এক শুক্রবারে মেয়েটার বাবা এসে হাজির! সাথে কত ফল আর মেয়েটার পছন্দের সব চকলেটস। সে মেনে নিয়েছে ওদের! ছেলেটা ভাবতে পারেনা। স্বপ্ন না সত্যি? এতো সুখ তার কপালে সইবে তো? মেয়েটাকে কয়েক দিনের জন্য নিয়ে যেতে চায়। তারপর পারিবারিকভাবে মেয়েটাকে তার হাতে তুলে দিবে। খুশি মনে বাবার সাথে চলে যায় সে। এই দিকে ছেলেটাও খুশিতে চিলেকোঠার বাসাটা ছেড়ে দেয়।
যাওয়ার সময় বাড়িওয়ালা কে পা ছুয়ে সালাম করে নেয় ছেলেটা। তারপর কয়েক দিন চলে গেছে। মেয়েটার বাসায় কয়েক বার ফোন করেছে ছেলেটা। কাজের বুয়া জানিয়েছে ফ্যামিলি ট্যুরে কক্সবাজারে গিয়েছে সবাই। আশ্বস্ত হয় ছেলেটা কিন্তু মনের ভেতর কোথায় যেন খচ খচ করে উঠে। এর মধ্যে আরো কয়েকটি সপ্তাহ পার হয়েছে। দুই দুইবার মেয়েটার বাসায় ও গিয়েছে সে। কাউকে পায়নি। এক সকালে একটা চিঠি আসে ছেলেটার নামে। সকালে ছেলেকে না ডেকে বাবা রুমে রেখে যায় চিঠিটা। চিঠি খুলে পায় তালাক নামা। সে অবাক হয় না। খুব বেশি কষ্ট ও পায়না। জানতো এমনি কিছু একটা হবে। ওদের শেষ দেখা হয়েছিলো আদলতে। মেয়েটা একবারের জন্যও ছেলেটার চোখের দিকে তাকায় না। একবার তাকিয়ে যে সর্বনাশ ডেকে এনেছিলো, সেটার পুনরাবৃত্তি চায় না আবার।

আর সেই গোলকপাল লেনের চিলেকোঠা? সেখানে নতুন আরেকটা দম্পতি এসে উঠেছে। তাদের ও নাকি প্রেমের বিয়ে! দেখো দেখি কান্ড!


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *