ডিটেকটিভ উপন্যাস কিংবা গল্প পড়ার প্রচণ্ড নেশা ছিল এক সময়। শুরু হয়েছিল অবশ্যই তিন গোয়েন্দা দিয়ে। রহস্য পত্রিকার গল্প গুলাও মাঝে মাঝে ভাল লাগতো। কিন্তু কেমন যেন উল্টাপাল্টা লাগতো। মনে হত কি যেন নেই। ইন্টারনেট ছিল না যে সার্চ করে জানবো ভালো গোয়েন্দা উপন্যাস কোনটা। মানুষের মুখে মুখে শুনেছিলাম শার্লক হোমস নাকি বেস্ট। আসে পাশের দুই চার জন কে জিজ্ঞেস করলাম সবাই বললো ফালতু। চাওয়া মাত্রই কিছু পেতাম না। কঠিন শাসন এর মধ্যে দিয়ে যেতে হত। তার পরও সাহস করে শার্লক হোমস কিনে দিতে বললাম। কিনেও দেয়া হোল। প্রচণ্ড অবাক হলাম যখন প্রথম উপন্যাস টা পরলাম। কিভাবে মানুষ এটাকে ফালতু বলতে পারে বলা যায় নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে পুরা সমগ্র শেষ করলাম। আবার পরলাম। অসম্ভব সুন্দর ছিল সেই সময়টা। তারপর ফেলুদা, ব্যোমকেশ সহ আরও অনেক ডিটেকটিভ উপন্যাস কিন্তু শার্লক মনে গেথে রইলো। তারপর অনেক বছর কেটে গেছে, বই পড়ার খেই টাও গেছে হারিয়ে। তারপর শুরু ডিটেকটিভ টিভি শো দেখা, মুভি দেখা। ছোট বেলায় বিটিভিতে দেখতাম এক্স-ফাইলস। বুঝতাম না কিছুই। একটা হরর শো মনে হতো। কিন্তু বড় বয়েসে আবার শুরু করলাম দেখা। যখন ৯ টা সিজন শেষ করলাম তখন আমার মনে বেস্ট ডিটেকটিভ এর স্থানটি নিয়ে নিলো ফক্স মুল্ডার। অসাধারণ একটা চরিত্র। এক্স-ফাইলস নিছক একটা হরর শো নয়। সাইন্স আর প্যারানরমাল এর মাঝখানের গ্রে এরিয়া নিয়ে করা শো টা। ফক্স মুল্ডারের শার্লক হোমসের মতন কেস সল্ভ করার অতিমানবিক ক্ষমতা নেই। কিন্তু তার হাল না ছাড়ার অভ্যাস, একের পর এক গভমেন্ট কন্সপাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া, সিক্রেট মিলিটারি এক্সপেরিমেন্ট এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সত্য জানতে চাওয়ার এক অদম্য মানসিকতায় মুগ্ধ না হয়ে কোন উপায় নেই। ফক্স মুল্ডারের ইমাজিনেশন, চিন্তার প্যাটার্ন , প্যারানরমাল সাইকোলজির উপর দক্ষতা, এক্সট্রিম পসিবিলিটিতে বিশ্বাস সব কিছুই এক দশক দর্শক কে ধরে রেখেছিলো টিভির পর্দায়। সাথে ছিল তার বিজ্ঞান মনস্ক সহকর্মী ডানা স্কালি। দুই ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের একসাথে অসাধারণ কিছু কেস সল্ভিং। বার বার হেরে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করা এক কথায় সত্যি অসাধারণ। কখনো যদি ডিটেকটিভ হওয়ার সুযোগ আসে তাহলে আমি শার্লক হোমস নয়, ফক্স মুল্ডার হতে চাইব।