আমার আমি

Spread the love

আমার কাছে দুনিয়ার সব চেয়ে কঠিন কাজটা মনে হয় নিজের সম্পর্কে লিখা। সবার দেখাদেখি আমারো একটু লিখতে ইচ্ছা করলো। ভীষনভাবে মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার। মায়ের মুখে শুনেছি আটাশির বন্যায় আমার জন্ম। জন্ম তারিখটাও কেমন যেন ৮/৮/৮৮।  যাই হোক স্কুলশিক্ষক বাবাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি অতি অল্প রোজগারে পাঁচ জন মানুষের একটা সংসার  টানতে। ছোট বেলায় আমার খুব কম চাওয়াই বাবা পূরণ করতে পারতেন। তখন অনেক দুঃখ হলেও এখন বুঝি সেটা আমার জন্য একটা বিশাল শিক্ষা ছিলো। ঢাকায় যে এলাকায় থাকতাম সেখানে অন্য সমবয়েসী ছেলেদের সাথে আমার মেলামেশা এক প্রকার বারণ ছিলো। স্কুল আর কোচিং টাইমটা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময় ঘরে বন্দি কাটতো। তাতে একটা উপকারই হয়েছিলো। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে লাগলো। ক্লাস নাইনে ওঠার আগেই গল্পগুচ্ছ, শরৎচন্দ্র রচনাবলী, জুল্ভার্ন,  শার্লক হোমস সহ আর কত বই সাবাড় করে ফেলেছিলাম। সাথে তো তিন গোয়েন্দা থাকতোই। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। আস্তে আস্তে আমাকে শিকল খুলে মুক্ত করে দেয়া হলো পরিবার থেকে। কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ। ভার্সিটি জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া। আবার প্রথম প্রেম হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। সব মিলিয়ে জীবনটা কেমন কঠিন হতে লাগলো দিন দিন। আমার স্বপ্নগুলো খুব ছোট ছিলো। একটা প্রেম করবো। পালিয়ে বিয়ে করবো। প্রথম প্রথম বাসা থেকে মেনে নিবে না। হয়তো কোন ছাদের এক চিলেকোঠায় টোনাটুনির সংসার পাতবো। বাবার মতই অল্প আয়ে টেনেটুনে সংসার চলবে। যাই হোক কোন স্বপ্ন পূরন হলোনা। গদবাধা জীবন থেকে দূরে থাকতে ফ্রীল্যান্সিং কে পেশা হিসাবে নিয়েছি। এখন জীবনে একটাই স্বপ্ন ঘুরে বেড়ানোর। বোহেমিয়ান জীবন আমাকে চুম্বকের মতন টানে। কখনো জেলেদের সথে নৌকায় ঘুরবো, কখনোবা ট্রাকের হেল্পারের সাথে বস্তার উপর শুয়ে শুয়ে রাতের তারা গুনবো। প্রতি রাতে এমন একটা জীবনের কথা চিন্তা করতে করতেই ঘুমাতে যাই। হয়তো সত্যি সত্যি এমন একটা জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুব বেশি কিছু লিখতে পারি না নিজের সম্পর্কে তাও অনেক কিছু লিখলাম। সবাই ভালো থাকবেন। পরম করুণাময় আমাদের সবাইকে এই বিপদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *